
07/03/2025
আমাদের সবার আদরের সন্টু চলে গেছে।
কারন হিমোপ্রোটোজোয়া।
এই হিমোপ্রোটোজোয়া কী? হিমো অর্থাৎ রক্ত সম্পর্কিত। প্রোটোজোয়া একরকমের জীবাণু। রক্তের ভেতরে এরা বাসা বাঁধে, বংশবিস্তার করে, থেকে যায়। রক্ত যেহেতু দেহের প্রতিটা অংশে সঞ্চারিত হয়, তাই রক্তের ক্ষতি ছাড়াও যে কোনো অরগ্যানকেই ক্ষতি করে দিতে পারে এই প্রোটোজোয়াগুলি।
হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে, লিভার, কিডনি খারাপ হয়ে যেতে পারে, নার্ভাস সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
জ্বর, খিদে না থাকা, পায়খানা, বমি, খিঁচুনি, প্যারালিসিস, স্কিন ডিজিজ, লোম ঝরে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া, চুপচাপ হয়ে যাওয়া, হিংস্র হয়ে যাওয়া, পায়খানা/বমি/পেচ্ছাপে রক্ত আসা, এই সমস্ত লক্ষণের কোনো একটাও যদি থাকে প্রাণীটির, বা কোনো লক্ষণ নাও যদি থাকে, তাও হিমোপ্রোটোজোয়া আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে।
এই অসুখের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হচ্ছে এটাই, যে, কোনো রোগলক্ষণ বিচার করে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন না যে প্রাণীটি হিমোপ্রোটোজোয়া আক্রান্ত, নাকি আক্রান্ত নয়।
রোগ নির্ণয় করার একমাত্র উপায় ব্লাডটেস্ট। দু'রকম ব্লাডটেস্ট হয়। একটি হচ্ছে হিমোপ্রোটোজোয়া স্লাইড টেস্ট। যেটাতে কাচের প্লেটের উপর রক্তের ফোঁটা ফেলে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা হয় প্রোটোজোয়া আছে কিনা। এবার, এটা যেহেতু ম্যানুয়াল টেস্ট, মানে মানুষ দেখে বিচার করে তাছাড়া অনুবীক্ষণ যন্ত্রের ক্ষমতা কতটা, এরকম নানান বিষয়ের কারণে এই টেস্টে অনেক সময়, ধরা নাও পড়তে পারে।
আরেকটি উন্নতমানের টেস্ট হচ্ছে RT-PCR. কিন্তু RT-PCR অনেকটাই খরচ সাপেক্ষ। যত ধরণের প্রোটোজোয়া হয় সব টেস্ট করাতে কম বেশি ছয় থেকে সাত হাজার খরচ পড়ে। যেখানে স্লাইড টেস্টটি হাজার দেড় হাজারের মধ্যে হয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময়েই স্লাইড টেস্টে নেগেটিভ আসার পরেও যখন পোষ্যের শরীর ঠিক হচ্ছে না, তখন RT-PCR করিয়ে দেখা যায় শরীরে প্রোটোজোয়ার সংক্রমণ আছে।
এখানে উল্লেখ্য, প্রিয় পোষ্যটির যদি এই অসুখ করে, তখন যা চিকিৎসার খরচ, সেটা কিন্তু টেস্টের খরচের তুলনায় অনেক বেশি। আর যন্ত্রণা, কষ্ট, প্রাণের মূল্যের তুলনায় কতটা সে তো হিসাবের বিষয় নয়।
যদি প্রিয় পোষ্যটির কোনো রকম লক্ষণ থাকে তাহলে তো অবশ্যই টেস্ট করাবেন। যদি কোনো লক্ষণ নাও থাকে, তাও বছরে দুইবার, অন্ততপক্ষে একবার, এই টেস্ট, সঙ্গে অন্যান্য কিছু টেস্ট যেমন, CBC, LFT, KFT, এগুলো করাতে থাকলে পোষ্যকে অনেকটা বিপদমুক্ত রাখতে পারবেন।
আর, খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একটা পোকাও যেন ওর গায়ে বসতে, কামড়াতে না পারে। একটা পোকা থেকেও হিমোপ্রোটোজোয়া হতে পারে। অনেকে বলেন পোকা বেছে দিই, একটা পোকা দেখলেও ফেলে দিই। হিমোপ্রোটোজোয়ার ক্ষেত্রে কিন্তু এই উপায়ে অসুখ ঠেকানো যাবে না। একদমই যাবে না। পোকা আটকানোর উপায়- প্রতি মাসে নিয়মিত ফিপ্রোনিল স্প্রে বা স্পট অন । এছাড়া ট্যাবলেট আছে, যেমন সিম্পারিকা।
এখানে একটা কথা বলি। ক্লাসে একটা বাচ্চার উকুন হলে যেমন বাকিদের উকুন হয়, তেমন এলাকার একটা কুকুরের গায়ে(বাড়ির বা রাস্তার) পোকা থাকা মানে সেই এলাকার অন্য (বাড়ির বা রাস্তার) পোষ্যদেরও পোকা হওয়ার সম্ভাবনা। পোকা রাস্তা থেকেও বাড়িতে যায়, বাড়ি থেকেও রাস্তায় যায়। এক বাড়ি থেকে পাশের বাড়িতেও যায়। এবং কন্ট্রোল করা না হলে খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করে। দেওয়ালে, আনাচে কানানে মাছের ডিমের মতো ডিম পাড়ে, তা থেকে চোখে দেখা যায় না এমন ছোট ছোট পোকা বেরিয়ে পোষ্যের রক্ত খেয়ে খেয়ে লার্ভা, পিউপা এরকম দশা পার করে বড় পোকাতে রূপান্তরিত হয়। তারপর আবার ওকেই কামড়ায়। পোকাটি নিজের জীবনের কোনো দশায় হিমোপ্রোটোজোয়া আক্রান্ত কুকুরকে কামড়ে থাকলে, পরে ভালো কুকুরকে কামড়ালে রোগ ছড়াবে। ফলে এটাও মাথায় রাখা দরকার। এলাকায় একটা পোষ্যের এই রোগ আছে মানে, অন্য পোষ্য বা প্রাণীরও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে গেল।
চিকিৎসা - চিকিৎসা আছে৷ কিন্তু সম্পূর্ণ রোগমুক্ত হওয়ার গ্যারান্টি নেই। সেরে যাওয়ার পর আবার ফিরে আসতে পারে এই অসুখ। বহু ক্ষেত্রে এমন হয়। ফলে একবার যদি কখনো এই অসুখ হয়ে থাকে৷ অতি অবশ্যই বছরে দু বার RTPCR টেস্ট, সঙ্গে অন্য টেস্টগুলি করাবেন। এছাড়া মৃত্যু আটকানোর উপায় নেই। মানতে কষ্ট হলেও এইটা সত্যি।
রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারি ডাক্তারের কাছেই পোষ্যদের চিকিৎসা করাবেন, যারা আন্দাজে চিকিৎসা করেন না, রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করেন। রোগ নির্ণয় না হলে সেই চিকিৎসায় রোগ সারবে না।
Quack এর কাছে চিকিৎসা করে সময় নষ্ট করবেন না । কারণ এক্ষেত্রে সময় খুব জরুরি । একটু দেরি হয়ে গেলেই আপনার পোষ্য কে হারাতে পারেন ।