11/09/2025
প্রাণীদের কৃমির রোগ থেকে মুক্তির উপায়
প্রাণী পালন আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ গরু ,মোষ, ছাগল, ভেড়া, হাস মুরগি প্রভৃতি প্রাণী আমাদের দুধ, মাংস, ডিম, শ্রমশক্তি প্রদান করে। কিন্তু একটি সাধারণ সমস্যা যেটা প্রায় সব প্রাণীকেই ভোগায় তা হলো কৃমির রোগ (Helminthiasis)।
কথায় আছে,
কৃমি হলে দুধ কমে,রোগ হয়,বৃদ্ধি হয় অল্প ।
কৃমিনাশক খাওয়ালে পাবে লাভ অসংখ্য।
সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রায় কৃমির ঔষধ দাও ।
অসুস্থ হলে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নাও ।
কৃমির রোগ কীভাবে হয়?
সাধারণত তিন ধরনের কৃমি দেখা যায় , গোলকৃমি, চ্যাপ্টা কৃমি ও ফিতাকৃমি।
1) প্রাণীরা ঘাস, খাদ্য বা পানির সাথে কৃমির ডিম খেয়ে ফেললে
2) মাটিতে মল-মূত্র পড়ে গেলে সেখান থেকেই সংক্রমণ ছড়ায়।
3) ছোট বাছুর, ছাগলছানা বা পোষা প্রাণী বিশেষভাবে বেশি আক্রান্ত হয়।
কৃমির রোগের লক্ষণ
1.প্রাণীর শরীর শুকিয়ে যাওয়া, ওজন না বাড়া চামড়া রুক্ষ হয়ে যাওয়া, লোম উজ্জ্বলতা হারানো
2.খাওয়ার পরও শরীর দুর্বল হয়ে পড়া
বাচ্চা প্রাণীর বৃদ্ধি ধীরগতি হওয়া
3.চোখ, দাঁতের মাড়ি ও জিভ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া (অ্যানিমিয়া/রক্তাল্পতা)
অতিরিক্ত ক্লান্তি, হাঁটার শক্তি কমে যাওয়া
4.ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা ,মাঝে মাঝে কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্ষুধা কমে যাওয়া বা অস্বাভাবিক ক্ষুধা
5.দুধ ও মাংসের উৎপাদন কমে যাওয়া
6.হঠাৎ মৃত্যুও হতে পারে (বিশেষত ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে)
প্রতিরোধের উপায়
1. নিয়মিত কৃমিনাশক খাওয়ানো
বাছুর/ছাগলছানা: 21দিন বয়স থেকেই কৃমির ওষুধ খাওয়ানো যায়,এক থেকে ছয় মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে একবার করে সকালে খালি পেটে কৃমির ঔষধ দেওয়া উচিত , এবং ছয় মাস পর প্রতি ৩ মাস অন্তর প্রাপ্তবয়স্ক গরু-ছাগল, মোষ, ভেড়া দের কৃমির ওষুধ দেওয়া উচিত। কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর 7দিন আগে ও পরে ভালো লিভার টনিক খাওয়ানো ভালো ।
একই কম্পোজিশন এর কৃমির বার বার না খাইয়ে ঔষধ চেঞ্জ করে করে খাওয়ানো দরকার ।
অব্যশই পশুচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
2. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ,গোয়ালঘর শুকনো ও পরিষ্কার রাখতে হবে।
3.গোবর এক জায়গায় জমা করে সার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
4. চারণভূমি পাল্টে পাল্টে ব্যবহার করা উচিত।
5.পানীয় জল সব সময় পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করতে হবে। নোংরা পুকুর বা জলা থেকে জল খাওয়ানো উচিত নয়।
6.সুষম পুষ্টি পর্যাপ্ত ঘাস, খৈল, ভুসি ও খনিজ লবণ খাওয়াতে হবে।
সুস্থ ও শক্তিশালী প্রাণী কৃমির আক্রমণে কম ভোগে।
সচেতনতার বার্তা
নিয়মিত কৃমিনাশক ব্যবহার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখলে প্রাণীদের কৃমির রোগ থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
কৃমিমুক্ত প্রাণী মানেই বেশি দুধ, বেশি মাংস, সুস্থ পরিবার এবং লাভজনক পশুপালন।
Dr. Avijit Bera
MVSc (Gold Medalist)
Veterinary Officer, Govt of West Bengal
Mob: 9093884144