07/08/2025
🥛 A1 ও A2 জিন: দুধের গুণগত পার্থক্যের রহস্য
গাভীর দুধে থাকা প্রধান প্রোটিনগুলোর একটি হলো β-casein, যা প্রায় ৩০% কেসিন প্রোটিন গঠনে ভূমিকা রাখে। এই β-casein প্রোটিনের দুটি ভিন্ন জিনগত রূপ রয়েছে – A1 ও A2। গাভীর জিন (DNA) অনুযায়ী, সে হয় A1 অথবা A2 ধরনের β-casein তৈরি করে, কিংবা উভয় প্রকারের মিশ্রণও তৈরি করতে পারে। এই দুটি রূপ দেখতে প্রায় একরকম হলেও, ৬৭তম অ্যামিনো অ্যাসিড পজিশনে মাত্র একটি পার্থক্যের কারণে দুধের হজম ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে (Jinsmaa & Yoshikawa, 1999)।
A1 ধরনের β-casein হজমের সময় BCM-7 (beta-casomorphin-7) নামের একটি পেপটাইড তৈরি করে, যা কিছু গবেষণায় মানুষের হজমে সমস্যা, অ্যালার্জি, ইনফ্লেমেশন এবং এমনকি টাইপ-১ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে (Woodford, 2007; Laugesen & Elliott, 2003)। অপরদিকে, A2 ধরনের β-casein থেকে BCM-7 তৈরি হয় না বা খুব কম পরিমাণে হয়, ফলে এটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও হজমে সহায়ক বলে বিবেচিত হয়।
প্রাকৃতিকভাবে ভারতীয় উপমহাদেশ, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দেশি গরু (যেমন: গির, সাহিওয়াল, রেড সিন্ধি, ও বাংলাদেশি দেশি গরু) সাধারণত A2 জিন বহন করে থাকে। বিপরীতে ইউরোপ ও আমেরিকার জনপ্রিয় দুধ উৎপাদনকারী জাত যেমন: হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান, জার্সি ইত্যাদি গাভীর মধ্যে A1 জিনের আধিক্য দেখা যায় (Kumar et al., 2012)। বাংলাদেশে ক্রসব্রিড গাভীর মধ্যে A1 ও A2 উভয় ধরনের জিনই থাকতে পারে, তাই বাছুর উৎপাদনের সময় জেনেটিক স্ক্রিনিং করা গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে অনেক দেশেই "A2 Milk" নামে দুধ বাজারজাত করা হচ্ছে, যা শুধুমাত্র A2 β-casein যুক্ত গাভীর দুধ। এ ধরনের দুধ সাধারণত শিশু, অ্যালার্জি-প্রবণ ব্যক্তি এবং হজমজনিত সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য উপযোগী হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে (The A2 Milk Company, 2020)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতের দুধ শিল্পে A2 Milk হতে পারে একটি স্বাস্থ্যবান, নিরাপদ এবং উচ্চমূল্যের প্রিমিয়াম পণ্য।
✅ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে
দেশি গরুদের বেশিরভাগই A2 β-casein বহনকারী।
ক্রসব্রিড গাভীদের মধ্যে A1 ও A2 মিশ্র থাকতে পারে – তাই প্রয়োজন জেনেটিক স্ক্রিনিংয়ের
উপকারী দিক:
A2 জিন ও দুধ স্বাস্থ্যকর ও হজমে সহায়ক, বিশেষ করে শিশু ও সংবেদনশীলদের জন্য।
গাভীর জাত বাছাই ও দুধ আলাদা করে বাজারজাতকরণে "A2 Milk" হতে পারে নতুন সম্ভাবনার দিক।
🔬 তথ্যসূত্র (References):
Jinsmaa, Y., & Yoshikawa, M. (1999). Enzymatic release of neocasomorphin and beta-casomorphin from bovine beta-casein. Peptides, 20(8), 957–962.
Woodford, K. (2007). Devil in the Milk: Illness, Health and the Politics of A1 and A2 Milk. Chelsea Green Publishing.
Laugesen, M., & Elliott, R. (2003). Ischaemic heart disease, Type 1 diabetes, and cow milk A1 beta-casein. New Zealand Medical Journal, 116(1168).
Kumar, S., et al. (2012). Status of A1 and A2 beta-casein gene in Indian milch animals. Indian Journal of Animal Sciences, 82(2), 177–182.
The A2 Milk Company (2020). https://a2milk.com – Consumer and scientific information on A2 Milk.
সংকলনে
ডা.মু. মুনিরুজ্জামান
পরিচালক
প্রফেসর ইমদাদুল হক প্রাণী সেবা কেন্দ্র ও ভেটেরিনারি ডায়াগনোস্টিক সেন্টার