10/10/2024
আমি কে? আমার আইডেন্টিটি কি?
জগতের সবচেয়ে বড় ক্রাইসিসের নাম, আইডেন্টিটি ক্রাইসিস। স্নাতক পাশ করা যেকোন ছেলে বা মেয়ের কাছে সবচেয়ে বিব্রতকর প্রশ্ন "তুমি এখন কী করো?" কোনো আত্মীয়ের বাসায় গেলে, গাড়িতে কারো সাথে হঠাৎ দেখা হলে, স্কুলের সেই প্রিয় স্যারের সাথে দেখা হলে সবার একই প্রশ্ন "বাবা, তুমি এখন কি করো?"
মানে আপনি কি করেন সেটা নিয়েই যেন সমাজের সবার মাথা ব্যথা। আর আপনি যদি চাকরি না করে কৃষিকাজ করেন এবং উত্তর দেন আমি কৃষি উদ্যোক্তা তাহলে অন্তত আরো হাজারটা কথা হজম করতে হবে নিঃসন্দেহে। যেমন আমার ক্ষেত্রে শুনতে হয়, ওও কৃষিকাজ কর! নিজের হাতে নিজের ভবিষ্যতটা নষ্ট করলা। কৃষিকাজ যদি করবা তাহলে এতো পড়াশুনা করার কি দরকার ছিল।
ছোটবেলা থেকে শুরু করে একবারে শেষ জীবন পর্যন্ত আপনাকে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস বার বার বিভিন্ন রূপে ফেস করতে হবে। যখন বাচ্চার বাবা হবেন তখন "বাচ্চা কোন স্কুলে পড়ে? বাচ্চার রেজাল্ট কি? রোল নম্বর কত? এটাও বাবা মায়ের জন্য একটা বিরাট আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তৈরি করে।
স্কুলজীবন থেকে শুরু। প্রথমে ওমুকের ছেলে, ওমুকের ভাতিজা। এগুলো স্বাভাবিক। এই পরিচয়গুলো মানুষ প্রয়োজনের তাগিদ থেকেই তৈরি করে। কিন্তু এই পরিচয়গুলো দিয়েই শুরু হয় মানুষের নিজ পরিচয় ব্যতীত অন্য পরিচয়ে পরিচিত হয়ে ওঠার ধারা। এরপর ধীরে ধীরে মানুষ ছাত্র, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, উদ্যোক্তা, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদসহ আরো অনেক পরিচয়ে পরিচিত হয়ে ওঠে। আর এসব পরিচয় একসময় মানুষের স্বকীয় পরিচয়কে আড়াল করে।
আবার আপনি পড়াশুনা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে শুরু করেলেন কৃষিকাজ। যখন আপনি ভাবছেন আপনার আয় সন্তোষজনক, তবুও কাউকে বোঝাতে পারছেন না যে, এভাবেও সম্মানজনক ভাবে বেঁচে থাকা যাই। আপনার আয় বেড়েছে সেটা আপনার পরিবার বুঝতে পেরে আপনার জন্য মেয়ে দেখা শুরু করলো, এবার ছেলেটার বিয়ে দেয়া দরকার। আবার সেই একই প্রশ্ন "ছেলে কি করে? বাবার কি আছে? জমি_জমা কতটুকু?" এখানেও আইডেন্টিটি ক্রাইসিস প্রকট।
আমি নিজেও প্রচন্ড রকমের আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগি। তখন আমি নিজেকে বলি আমি মানুষ, আমি আশরাফুল মাখলুকাত এর বাইরে আমার আর যে পরিচয় গুলো আছে সেগুলো নিজেদের স্বার্থেই তৈরি করা।
তখন চোখ বন্ধ করে বলি...
সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।