24/08/2024
ভারত ডুম্বুর বাঁধ খুলে দিয়েছে, বাংলাদেশের ফেনী ও নোয়াখালী প্লাবিত!
চলুন, বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করি।
ভারতের ত্রিপুরায় ডুম্বুর লেকে একটি হাইড্রইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট রয়েছে। সেখানেই রয়েছে এই ডুম্বুর বাঁধ৷ বাংলাদেশে যেমন কাপ্তাই লেকের পানি বিদুৎ কেন্দ্রে রয়েছে কাপ্তাই বাঁধ।
সাম্প্রতিক সময়ে ত্রিপুরায় ভারী বর্ষণে সেখানে জলের চাপ বেড়ে যায় যা বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছিলো৷ সেজন্য তারা বাঁধের একটি গেট খুলে দেয়। এর আগে ১৯৯৩ সালে একবার খুলেছিলো।
না খুলে দিলে কি হয়?
না খুলে দিলে পানির চাপে বাঁধ ভেঙে গেলে ভয়াবহ পানির চাপে সম্পূর্ণ ফেনী মুহূর্তে তলিয়ে যাবে। তাই একটি গেট খুলে দেওয়া বরং পরিস্থিতি সামাল দেওয়ারই অংশ। এখানে ষড়যন্ত্র খুঁজে বের করা বোকামি। ভারী বর্ষণের উপর কারও হাত নেই৷ বরং অনেকবার ত্রিপুরায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলেও বাঁধ খুলে নি। ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধেও ত্রিপুরা রেকর্ড সংখ্যক শরনার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিলো। এটা মূলত প্রাকৃতিক দূর্যোগ। বাঁধ ভারতের অনেক ভিতরে যা বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে ৪০ কিলোমিটার ভিতরে। ত্রিপুরায় ইতিমধ্যে ৭ জন মারা গেছে। প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও ভারতে ত্রিপুরাতে। ডম্বুর লেক পানি থৈ থৈ। এখন যদি বাধ খোলা না হয়, আর হঠাৎ বাঁধ ভেঙে যায় তাহলে হাজারগুন বেশি ক্ষতি হবে উভয় দেশের। এখানে রাজনৈতিক কিছু নেই। দিনের বেলা পানি ৯২.১৫ মিটার ছিল। রাতে এইটা ৯৩.৮৫ মিটার হয়েছে, যেখানে ক্যাপাসিটি ৯৪ মিটার রাখা যায়। তাই বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আগেই ত্রিপুরা বাংলাদেশকে সতর্ক করে রাতের বেলাতেই বাঁধের একটি গেট খুলে দিতে বাধ্য হয়।
১৯৯৩ থেকে ২০২৪ সালের মাঝে ফেনীর বন্যা হয় নি?
অবশ্যই হয়েছে এবং এই মাসের শুরুতেও একবার হয়েছে। এই দায় আমাদেরই ছিলো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সীমাহীন দুর্নীতিকে দায়ী করা যায় এজন্য। ওই অঞ্চলের মানুষের জানমাল ও কৃষি সম্পদ বাঁচাতে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর উপর ১৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২২ কিলোমিটার ‘মাটির বাঁধ’ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০১১ সালে বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ হলে পরের কয়েক বছর বন্যামুক্ত ছিল স্থানীয়রা। ২০১৩ সালে আকস্মিক বাঁধের ৩টি অংশ ভেঙে যায়।
পরে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভাঙন অংশ মেরামত করা হয়। এরপর প্রতি বছর ভাঙে বাঁধের বিভিন্ন স্থান। গত পাঁচ বছরে মুহুরী নদীর ভাঙা বাঁধ মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খরচের হিসাবে দেখা যায়, ২০১৮ সালে ২২টি অংশে মেরামতে ২ কোটি ৪৪ লাখ, ২০১৯ সালে ১৫টি মেরামতে ১ কোটি ৭৯ লাখ, ২০২০ সালে ২২টি মেরামতে ১ কোটি ৫০ লাখ, ২০২১ সালে ২১টি মেরামতে ২ কোটি ১৩ লাখ, ২০২২ সালে ৬টি মেরামতে ৭১ লাখ ব্যয় করেছে।
অর্থাৎ বাংলাদেশ নিজেরাই বন্যা মোকাবিলায় কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি অথচ বন্যা হলেই পাশের দেশকে দোষ দিয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধতা ঢেকে রাখতে তৎপর হয়।।
সত্য ও সুন্দরের পথে স্বাগতম।।