21/06/2023
⚠️" ইনব্রিডিং" অন্তঃপ্রজনন কি? এর কুফল⚠️
কিছুদিন হলো আমার ঘরের কিছু বাচ্চা বি*ক্রির জন্য পোষ্ট করেছি। মাশা-আল্লাহ ভাল সারাও পেয়েছি।
কিন্তু একটা বিষয়ে কথা না বললেই নয়, সেটা হচ্ছে পাখি পালকেরা জোড়া নিতে চাচ্ছে জোড়া মানে একে একে দুই নয়। তারা আমার ২ টা পাখি নিয়ে জোড়া দিতে চাচ্ছে। ভয়ংকর একটা ব্যাপার। অনেকেই এই ব্যাপারটি জানেই না। কিছু মানুষতো আরো একধাপ এগিয়ে তারা এই ব্যাপারটা জানলেও মানে না।।
ব্যাপারটা দুঃখ জনক হলেও সত্যি এই ব্যাপার টা নিয়ে ফেইসবুকে তেমন কোন লেখাও নেই।
তাই এই বিষয়ে কিছু তথ্য উপস্থাপন করছি।।
আশাবাদী বড় বড় ব্রিডার যারা আছেন তারা এই বিষয়টি নিয়ে আরো বিস্তারিত জানাবেন।
⚠️" ইনব্রিডিং" অন্তঃপ্রজনন কি? এর কুফল⚠️⚠️
আমদের দেশের ৯০% পাখালই জানেনা ইনব্রিডিং কি বা কিভাবে হয় এবং এর পরিণতি কি।
কারন ইনব্রিডিং (Inbreeding) বা অন্তঃপ্রজনন নিয়ে আলোচনা না হওয়ায় অনেকেই আজ হয়ত প্রথম শুনলেন বা জানলেন।
আমাদের দেশের খামারিরা নিজের অজান্তেই ইনব্রিডিং করানোর মাধ্যমে পশু বাখি দিন দিন ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রাকার, বিকলাঙ্গ ও অসুস্থ্য করে ফেলছে।
"ইনব্রিডিং (Inbreeding) বা অন্তঃপ্রজনন হচ্ছে কাছাকাছি জিনের মধ্যে মিলন। অর্থাৎ রক্তের সম্পর্কের সাথে মিলনের ফলে যে সন্তান বা বাচ্চা জন্ম নিচ্ছে সেটাই ইনব্রিডিং।
জেনেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিকট সম্পর্কযুক্ত পিতামাতা হতে প্রজন্মের সৃষ্টি। যেমনঃ
ক) ভাই x বোন = ইনব্রিড
খ) মা x ছেলে = ইনব্রিড
গ) বাবা x মেয়ে = ইনব্রিড
এভাবে বংশ পরম্পরায় যদি হতে থাকে সেটা ইনব্রিডিং।
প্রানী সম্পদে ইনব্রিডিং:
প্রাণীর মধ্যে পুনঃপুনঃ প্রজনন হলে ইনব্রিডিং প্রানী তৈরি হয়। বিশ্বজুড়ে প্রজাতির সংখ্যা কমে আসার মুল কারন অন্তঃপ্রজনন। আমাদের প্রাণিসম্পদের সর্বক্ষেত্রেই ইনব্রিডিং সমস্যার প্রকট আকারে ধারন করেছে। আমাদের দেশের দেশী, হাঁস, মুরগি, ব্লাক বেঙ্গল ছাগল, ভেড়া, দেশী গরু কোন প্রানীতে নাই ইনব্রিডিং?
ইনব্রিডিং এর ফলে দেশী মুরগির আকার ছোট হয়ে আসছে, ডিম উৎপাদন নাই বললে চলে, তেমনি হাঁসের ক্ষেত্রে, ছাগলের আকার তো দিনে দিনে ছোট হয়ে আসছে। এগুলো ইনব্রিডিং এর প্রতিক্রিয়া।
ইনব্রিডিং বন্ধ করে পাখি ও পশু প্রজাতির সঠিক আকার, সাইজ ও জাত ধরে রাখা যায়।
এখনই যদি আমরা ইনব্রিডিং সমস্যার সমাধান না করতে পারি তবে ভবিষ্যতে নিম্নমানের পশু পাখিতে বাজার সয়লাব হয়ে যাবে।
আপনি আমি যারা ইনব্রিডিং সম্পর্কে জানি এবং এর থেকে বাচতে বাজার থেকে পাখি সংগ্রহ করি তারাও যে এর ভুক্তভোগী হব না তাও শিওর হব কি করে?
ইনব্রিডিংয়ের কুফলঃ-
রক্তের সম্পর্কের সাথে মিলনের ফলে যে সন্তান জন্ম নিচ্ছে সেটাই ইনব্রিডিং। আমাদের মানুষের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক বিয়ে ইসলামে নিষিদ্ধ ও নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে বিজ্ঞানসম্মত নয় । পশু পাখির বেলাতেও এর ব্যাতিক্রম নয়।
চাচাতো, মামাতো, খালাতো ও ফুফাতো ভাই-বোনদের মধ্যে বিয়ের পরিণামে যে সন্তান হয়, তার মধ্যে জন্মগত ও স্বাস্থ্য ত্রুটি দেখা দেয়ার ঝুঁকি বেশি। নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের জিনগত অস্বাভাবিকতার হার এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি সাধারণ শিশুদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি।
ভাই বোন প্রজননে প্রতি জেনারেশনেই ২৫% জেনেটিক গুনাগুন হ্রাস পায়।
পরিবর্তিত পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতাও কমে যেতে থাকে।
ইনব্রিডিংয়ের ফলে স্পার্ম বা শুক্রাণুর মানের উপরে প্রভাব ফেলে।
এদের শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত না করতে পারার অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ শতাংশ হয়েছে।
বংশগতির সাধারণ সূত্রানুসারে স্বামী ও স্ত্রী দুজনেরই যদি একই জীন লুকায়িত (Recessive) থাকে তাহলে শতকরা ২৫ ভাগের মতো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সম্ভাবনা থেকে যায় ত্রুটিপূর্ণ জেনেটিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে সন্তান জন্মানোর। এবং ৫০% সম্ভাবনা থাকে এ জীনের বাহক হওয়ার। ঠিক তেমনি প্রানী জগতের বিষয়টি একই রকম।
প্রাণীতে ইনব্রিডিং হলে কি হয়??🚫
ক) উন্নত জাত থেকে অনুন্নত জাতে পরিনত হয়।
খ) শাররীক বৃদ্ধির হার খুবই কম ও দূর্বল
প্রকৃতির হয় এবং খর্বাকৃতি আকারের হয়।
গ) জন্মগত ত্রুটি, শাররীক বিকলাঙ্গতা চলাফেরা অসামঞ্জস্যতা, বাঁকা মুখমন্ডল বা চোখ ডাবানো হয়।
ঘ) শরীরে লোমের আধিক্য।
ঙ) জন্ম অন্ধত্ব।
চ) বিভিন্ন চর্মরোগ।
ছ) স্নায়ুকোষের ক্ষয়।
জ) মৃত বাচ্চা প্রসব।
ঝ) বাচ্চার উচ্চ মৃত্যুহার।
ঞ) নিম্নতর জন্ম ও কম ওজনে জন্ম নেয়া।
ট) দুধ ও মাশেং ও ডিমের উৎপাদন কম হওয়া।
ঠ) শুক্রাণুর উর্বরতা কম।
ড) দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
ঢ) ১ বারে গর্ভধারন করতে না পারা, বারবার প্রজনন করানো।
ণ) প্রজনন ক্ষমতা না থাকা অর্থাৎ বন্ধ্যাত্ব।
ত) ডিমে ভ্রুন না আসা বা অনেক ডিম দিলেও বাচ্চা ফোটার হার কমে যাওয়া।
দ) পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পারা।
ধ) প্রতি জেনারেশনেই ২৫% জেনেটিক গুনাগুন হ্রাস পায়।
ধন্যবাদান্তে
শামীম আহমেদ
পরিচালক, এস স্কোয়ার টার্কি ফার্ম।
Collected