05/12/2024
এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্স নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের ভেটেরিনারিয়ানদের গুরুত্ব:
এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্স (AMR) আজকের বিশ্বে এক ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবাণুনাশক ও অ্যান্টিবায়োটিকের অযাচিত এবং অতিরিক্ত ব্যবহার জীবাণুগুলিকে ধীরে ধীরে এই ওষুধের প্রতি প্রতিরোধী করে তুলছে। ফলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মতো কৃষিপ্রধান দেশে যেখানে পশুপালন ও পোল্ট্রি শিল্প অর্থনীতির বড় একটি অংশ দখল করে আছে, সেখানে ভেটেরিনারিয়ানদের ভূমিকা এ সমস্যা মোকাবিলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভেটেরিনারিয়ানদের ভূমিকা
১. সচেতনতা বৃদ্ধি
বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের বিষয়ে খামারীরা অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক জ্ঞান রাখেন না। ভেটেরিনারিয়ানরা মাঠপর্যায়ে কাজ করে খামারীদের অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার, ডোজ এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করতে পারেন।
২. রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসা
অনেক সময় পশু ও পাখির ছোটখাটো রোগের জন্যও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। ভেটেরিনারিয়ানরা সঠিক রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
৩. অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের নিয়ম মেনে চলা
ভেটেরিনারিয়ানরা নিশ্চিত করতে পারেন যে অ্যান্টিবায়োটিক শুধুমাত্র প্রয়োজন অনুযায়ী এবং সঠিক ডোজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া Withdrawal Period (অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পর খাবার হিসাবে পশু-পাখি ব্যবহারের সময়কাল) সম্পর্কে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে তারা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারেন।
৪. গবেষণা ও ডেটা সংগ্রহ
AMR সংক্রান্ত গবেষণা এবং আক্রান্ত এলাকা চিহ্নিত করতে ভেটেরিনারিয়ানরা ভূমিকা রাখতে পারেন। তারা জীবাণুর রেজিস্টেন্স ধরণ শনাক্ত করতে পারেন, যা পরবর্তী নীতিমালা প্রণয়নে সাহায্য করবে।
৫. ভ্যাকসিন এবং প্রতিরোধমূলক পদ্ধতি
ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য প্রতিরোধমূলক পদ্ধতির প্রচার ও প্রয়োগে ভেটেরিনারিয়ানদের ভূমিকা অপরিহার্য। রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের ব্যবহার অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা কমিয়ে আনে।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
বাংলাদেশে ভেটেরিনারি খাতের সামনে কিছু উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব
অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতা
তহবিল এবং গবেষণা সুযোগের সীমাবদ্ধতা
এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা জরুরি। ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ, গবেষণায় বিনিয়োগ এবং কৃষক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশে এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্স নিয়ন্ত্রণে ভেটেরিনারিয়ানরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। সঠিক পরিকল্পনা, নীতিমালা, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তারা AMR-এর মতো বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানে অবদান রাখতে পারবেন। এজন্য ভেটেরিনারিয়ানদের যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত সুযোগ নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন।
কপি পোষ্ট