11/05/2025
কবুতর পালা সবচেয়ে সহজ কাজ!
জোড়া দাও, বাচ্চা বড় হলে ধাপরিতে ছাড়, রোজ সকালে ছাড়, খাবার দাও, পাল্লা দেও ব্যাস শেষ...
আসলেই কি তাই। চলুন একজন গিরিবাজ পালকের সারা বছরের কষ্ট ও টেনশনের সংক্ষিপ্ত একটা নমুনা দেখি
১) প্রথমত সবচেয়ে সহজ কিন্তু টেনশনের কাজ জোড়া দেয়া। বিশেষ করে যারা রেস বা ফ্লাই করাই। পেয়ারিং ঠিক হলো কিনা, বাচ্চা কেমন আসবে, কালার কেমন আসবে তার টেনশন।
২) ডিম পারার সময় হলে টেনশন ডিম খোরায় পারলো নাকি খোরার বাইরে। ডিম জমলো কি জমলো না!
৩) বাচ্চা ফুটলে টেনশন বাচ্চা ছোট বড় হলো কিনা, বুকের হাড় বাকা হয় নি তো, মশা কামড়ায় কিনা! নিয়মিত খাবার পানি দেয়ার কষ্ট তো আছেই
৪) বাচ্চা উঠার পর টেনশন বাচ্চা ঠিকমত ছাদে সেট করা নিয়ে। উচু ছাদ হলে নিচে পরে গেলে, নীচু ছাদ হলে দূরে গেলে ছাদ চিনবে কিনা। বাচ্চা হারালে খুজতে ভালই কষ্ট হয়৷
৫) বাচ্চা সেট হলে টেনশন আরো বেশি৷ চাকলায় সেট হচ্ছে কিনা বা উড়ে আকাশে পিনে গেলে ঠিকমত নামতে পারে কিনা।
৬) তারপর আসে ঝড়, বাতাস ও বৃষ্টি৷ হারিয়ে যাওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা থাকে। দেখা যায় মেঘ দেখে কবুতর ছাড়লাম না, সারাদিন আর বৃষ্টি হলো না। আবার কড়া রোদ দেখার পর ছাড়লাম কিন্তু কিছুক্ষণ পর ঝড় বৃষ্টি হলো।
৭) তারপরর আসে বৃষ্টির দিন, মল্টিং এর জন্য ভিজানো৷ কবুতরের ঠান্ডা লাগলো কিনা, মল্টিং সঠিকভাবে শুরু হলো কিনা, সবগুলির মল্টিং ক্লিয়ার হলো কিনা টেনশন। আষাঢ় মাসের দুপুরে সবাই যখন রিলাক্স করে, একজন কবুতর পালক তখন ভিজে ভিজে কষ্ট করে কবুতর খাওয়ায়, ট্রে ক্লিন করে। কি যে কষ্ট।
৮) মল্টিং শেষ হওয়ার পর ভাদ্র মাসের রোদ খাওয়ানো। কবুতরের সাথে সাথে নিজেদের ও চামড়া কালো বানানোর কষ্ট৷ আবারো কবুতর হারানোর টেনশন। ভারী শরীরে উড়তে গিয়ে প্রায়ই কবুতর হারায়।
৯) ভাদ্র মাসের পর শুরু হয় উড়ানোর টেনশন। উড়ে না, হাপায়, চকরায়, হজম হয় না, নর-মাদী মুসলি। টেনশন আর টেনশন। এই খাবার আনো, অই পানি বানাও। কালা, সবুজ, গরিবি, বড়লোকি পানি বানানো বা রেসিপির খোজার কষ্ট।
১০) শুরু হলো পাল্লা। আবারো টেনশন। পাল্লার রোড, স্পট সিলেকশনের টেনশন।ট্রান্সপোর্ট খরচের টেনশন। সখের ঘুম বাদ দিয়ে পাল্লায় বের হওয়ার কষ্ট । পাল্লায়াল্লায় কবুতর ছাড়ার পর টেনশন বাজ নিয়ে। বাসায় আসার পর টেনশন বাসায় কয়টা আসলো কিনা, আসার পর টেনশন ঠিকমত বা সুস্থভাবে আসলো কিনা, ঠিকমত রিকভারি হলো কিনা?
১৪) তারপর আসে টুর্নামেন্ট/বাজি/প্রতিযোগিতার টেনশন। কয়টা আসলো, কখন আসলো।
এছাড়া কবুতর অসুস্থ হলো কিনা, কবুতরকে কেউ নাক্কি মারলো কিনা টেনশন। ঘুম আর সুখ বাদ দেয়ার এমন হাজারো কষ্ট একজন কবুতর পালক ভোগ করেন৷ সারা বছরের কষ্টগুলো করে কিছু মোমেন্টের জন্য।
যেমন বাচ্চা খাওয়ানোর দৃশ্য, বাচ্চার চাকলা সেট হলে উড়ার দৃশ্য, দুপুর বা বিকালে কবুতরের একসাথে খাবার খাওয়ার দৃশ্য, শীতকালে চাকলার পিনে যাওয়া, দৌড়ে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়ার দৃশ্য, পাল্লায় হাইট নেয়ার দৃশ্য, বিশেষ করে পাল্লা থেকে বাড়ির উপর আশার পর দুই ডানা ছেড়ে নিচে নামার যে দৃশ্য টা...... মন কে আরো বেশি আনন্দিত করে তুলে,আর যারা অফিস / চাকরি করে কবুতর পালে তাদের কষ্ট যেন আরো বেশি কবুতর বাসায় ঠিক মত নামলো কিনা।বা বাজের অক্রমনে হারিয়ে গেছে কিনা মনের মধ্যে কত কি চিন্তা আসে।
আল্লাহ সবার কবুতর ও তাদের পালকদের ভাল রাখুন।
একটা কবুতর প্রেমিই বুঝে তার মনের আনন্দ। ভালবাসা অবিরাম প্রতিটা কবুতর প্রেমীর জন্য।
Pigeon Fly