25/03/2021
● সামুদ্রিক বিড়াল বা সামুদ্রিক মাছ
স্টিংরে বা শাপলা পাতা মাছ ( Stingray Fish)
সত্যি বলতে কি, ওদেরকে দেখলে মাছ বলেই মনে হয় না, ওদের শরীর এমনই চ্যাপ্টা! এই স্টিংরে মাছ তো বটেই, হাঙ্গরদের জ্ঞাতি ভাইও। আর হাঙ্গরদের অন্যান্য জ্ঞাতি ভাইদের মতোই, ওদের শরীরেও কোনো হাড় নেই। হাড়ের বদলে ওদের শরীরে থাকে কার্টিলেজ। কার্টিলেজ চেন? আমাদের নাকের আগায় যে নরম হাড়ের মতো অংশটি আছে না, সেটি-ই কার্টিলেজ।
এই স্টিংরেদের দেখতে মাছের মতো মনে হয় না কেন, বলো তো? ওদের ইয়া বড়ো পাখার জন্য। ওই বড়ো পাখা দুটির জন্য ওদেরকে বরং চ্যাপ্টা গোল একটা চাকতির মতো মনে হয়। এখন কথা হলো, এই গোল শরীর নিয়ে ওরা সাঁতার কাটে কি করে? অনেক স্টিংরে ঠিক সাঁতার কাটে না, ভেসে বেড়ায়। সাঁতার কাটার জন্য স্টিংরে ওদের পুরো শরীর নিয়েই নড়াচড়া করে। শরীর দুলিয়ে দুলিয়ে ওরা পানির নিচে ভেসে বেড়ায়। বাকিদের সাঁতার কাটার প্রণালী তো আরও মজার। ওরা সাঁতার কাটে না বলে বলা উচিত, ওরা পানির নিচে উড়ে বেড়ায়। পাখিরা যেমন বাতাসে ডানা ঝাপটে ওড়ে, এসব স্টিংরেও পানির নিচে ডানা ঝাপটে সাঁতার কাটে!
এই গোল চ্যাপ্টা শরীরের স্টিংরে মাছদের পেছনে একটা লম্বা লেজও থাকে। সেই লেজটাও ঠিক মাছের লেজের মতো নয়। এই লেজের কিন্তু একটা বিশেষত্বও আছে। এই লেজগুলো স্টিংরেদের আত্মরক্ষার হাতিয়ার। হয় এই লেজগুলো ভীষণ সরু আর ধাঁরালো, নয়তো বিষাক্ত। ধাঁরালো-ই হোক আর বিষাক্ত-ই হোক, আত্মরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে দুই ধরনের লেজই ভীষণ কার্যকর। আর তাই, যে ধরনের লেজওয়ালা স্টিংরে-ই হোক, ওদের বেশি ঘাঁটানোর দরকার নেই। নইলে বিরক্ত হয়ে বা ভয় পেয়ে তোমার শরীরে লেজ গেঁথে দিলেই হয়েছে, আর দেখতে হবে না!
স্টিংরেরা সাধারণত গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলগুলোর সাগরের অগভীর অংশে বাস করে। আর দিনের বেশিরভাগ সময়েই ওরা সাগরের তলদেশে শুয়ে থাকে। শুয়ে থাকে মূলত দুটি কারণে- হাঙ্গরের মতো শিকারী মাছদের হাত থেকে বাঁচার জন্যে, আর শিকার ধরার জন্যে। আর মজার বিষয় কি জানো? সাধারণত ওদের গায়ের রংও হয় ওদের বাসভূমির কাঁদা বা বালুর রংয়ের মতোই।
স্টিংরেদের শরীরের সবচেয়ে মজার ব্যাপারটা কি জানো? ওদের চোখদুটো তো শরীরের উপরের দিকেই; নাক আর মুখ কিন্তু নিচের দিকে। তাই বিজ্ঞানীদের ধারণা, ওরা চোখে দেখে শিকার করে না, বরং শিকার করার জন্য অন্য কৌশল ব্যবহার করে। শিকার করার জন্য ওদের শরীরে এক বিশেষ ধরনের সেন্সর আছে। এই সেন্সরের সাহায্যে ওরা শিকারের শরীর থেকে বের হওয়া হালকা বৈদ্যুতিক তরঙ্গ টের পেয়ে যায়। তার মাধ্যমেই ওরা শিকার ধরে। আর ওদের শিকারের তালিকায় কারা আছে জানো? নানা ধরনের ঝিনুক, চিংড়ি, কাঁকড়া- এমনি সব জলের পোকারা।
ওরা বাঁচে ১৫-২৫ বছর। সাধারণত লম্বায় হয় দুই মিটার বা সাড়ে ৬ ফিট, আর গড়ে এক-একটির ওজন হয় ৭৯০ পাউন্ড বা ৩৫৮ কেজি। পৃথিবীতে প্রায় ৬০ প্রজাতির স্টিংরে আছে।