12/08/2025
ও মারা গিয়েছিল মার্চ মাসে। ভেটেরিনারি চিকিৎসক তার মৃতদেহ ও মল দেখে বলেছিলেন, হাতিটি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিল। পানিশূন্যতা ছিল তার। এই অবস্থাতেই তাকে চুয়াডাঙ্গা থেকে হাঁটিয়ে চাঁদাবাজি করাতে করাতে মাগুরা পর্যন্ত নিয়ে আসে। প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ।
খাবার নেই, বয়সের ভার, ডায়রিয়া, গরমে পর্যাপ্ত পানি ছাড়াই পিচ ঢালা রাস্তা দিয়ে নির্মমভাবে তাকে হাঁটানো হয়৷ শরীর না টানলেও সে প্রতিবাদ করতে পারেনি। কেন? ভয়। কিসের ভয়? পিঠে বসে থাকা মাহুতের হাতের লোহার হুকের গুঁতো ও বেধড়ক পিটুনি। এত বিশাল হাতি অথচ এই সামান্য পিটুনিতে ভয়? কিভাবে? শৈশবের সেই হাদানি প্রশিক্ষণ। পিটুনি দিয়ে দিয়ে মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার নির্যাতন। যা তাকে আজীবন দাসত্বে বন্দী করে ফেলে!
ওর এই মৃত্যুর, এই নির্যাতন ও নির্মমতার বিচার হয়নি। আজ বিশ্ব হাতি দিবস। আমার কাছে হাতির জন্য আলাদা কোন দিবস নেই। আমার কাছে প্রতিদিনই হাতি দিবস। সে বাংলাদেশের হাতি হোক অথবা এশিয়া বা আফ্রিকার যেকোন হাতি হোক। প্রতিদিনই যে আমি হাতি বাঁচাতে কাজ করছি, বিষয়টা তেমনও নয়। কিন্তু প্রতিদিন আমি তৈরি হচ্ছি আমার বাকি জীবনের জন্য। যে জীবন কেবল হাতি আর বিপদে পড়া প্রাণীদের জন্য উৎসর্গ করা।
আমি বন্যহাতিদের দুরাবস্থার জন্য প্রচন্ড কষ্ট পাই৷ এবং আশা করি, যারা বাংলাদেশে বন্যহাতি রক্ষায় কাজ করছেন, তারা সফল হোক। ক্যাপ্টিভ হাতির জন্য চিন্তা করার, কাজ করার, ভয়েস রেইজ করার মানুষের সংকট রয়েছে বিশ্ব জুড়েই। এর একটা বড় কারণ, কঞ্জারভেশনের মাপকাঠিতে বন্যহাতি যে গুরুত্ব পায়, ক্যাপ্টিভ হাতির সেই গুরুত্ব কঞ্জারভেশনিস্টদের কাছে নেই। আবার বিশ্ব জোড়া যত ফান্ড আর প্রকল্প, তা বন্যহাতির জন্য বরাদ্দ৷ দোষের নয়৷ বিশ্ব নীতি যেভাবে চলে সেভাবেই চলবে সবাই এটা স্বাভাবিক।
এর মাঝেও, আমরা যেন একজন আমিরবাহাদুর, একজন সম্রাট, একজন নীহারকলি, একজন সুন্দরী, একজন বাবরবাহাদুর, একজন রাজাবাহাদুরের ২০/৩০/৪০/৫০/৭০ বছরের নির্যাতন ও শেকলবন্দী একাকী জীবনের যন্ত্রণা অস্বীকার না করি। হাতি যেন আমাদের কাছে একটা সংখ্যা, একটা ডাটা, একটা রিসার্চ পেপার আর একটা প্রকল্পের হয়ে না থাকে! প্রতিটি হাতি যেন একজন ব্যক্তি হিসেবে গুরুত্ব পায়। গুরুত্ব পায় তার অধিকার।
আমি একটা বড় সংকল্প নিয়ে শপথ নিয়েছি হাতিদের জন্য। সাথে বন্ধুরা আছে। আপনিও আসুন আমাদের সাথে...একটা মুক্তির চর্চায় কাজ করি।