18/10/2023
গরুর উন্নত জাত ও পরিচিতি
শাহীওয়াল জাতঃ
শাহীওয়াল এই উপমহাদেশের দুধাল গাভী রূপে সুপরিচিত। শাহীওয়াল গাভী দুধ উৎপাদনের জন্য একটি উৎকৃষ্ট জাত।
শাহীওয়াল গাভী সাধারনত পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে দেখা য়ায়।
শাহীওয়াল গরুর কিছু বৈশিষ্ঠ্যঃ
* শাহীওয়াল জাতের গরু ধীর ও শান্ত প্রকৃতির।
* শাহীওয়াল জাতের গরু আকারে বেশ লম্বা এবং মোটাসোটা ভারী দেহ।
* সাধারণত এ জাতের গরুর দেহের রং ফ্যাকাসে লাল বা হালকা হলুদ। তবে কখোনো গাঢ় লাল বা লালের মধ্যে সাদা ও কালো ছাপযুক্ত হয়।
* মাথা প্রশস্ত, পা ছোট, শিং ছোট কিন্তু মোটা।
* গলকম্বল বৃহদাকার যা ঝুলে থাকে।
* শাহীওয়াল জাতের গরুর ত্বক পাতলা ও শিথিল।
* গাভীর ওলান বেশ বড়, চওড়া, নরম, মেদহীন এবং ঝুলন্ত। বাটগুলো লম্বা মোটা ও সমান আকৃতি বিশিষ্ট। দুগ্ধ শিরা বেশ স্পষ্ট যা দূর থেকেও বোঝা যায়।
* লেজ বেশ লম্বা, প্রায় মাটি ছুয়ে যায়। লেজের আগায় দর্শনীয় এক গোছা কালো লোম থাকে।
* বলদ ও ষাঁড় ধীর ও অলস।
* শাহীওয়াল গাভী দৈনিক ১০-১৫ লিটার দুধ দেয় ।
* বাৎসরিক দুধ উৎপাদন ২,১৫০-৪,০০০ লিটার। চর্বির পরিমান ৪.৫%।
* শাহীওয়াল গাভীর ওজন ৩৪০ কেজি এবং ষাড়ের ওজন ৫২২ কেজি হয়।
* জন্মকালে বাছুরের ওজন ২২-২৮ কেজি
জার্সিঃ
জার্সি জাতের উৎপত্তি ইংলিশ চ্যানেলের জার্সি নামক ব্রিটিশ দ্বীপ থেকে। এই জাতটি এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশী পরিমানে পাওয়া যায় ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ।
জার্সি জাতের গরুর বৈশিষ্ঠঃ
* বিদেশী দুধাল গাভীর মধ্যে জার্সির আকার সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকার।
* এ জাতের গাভী আচরণে শান্ত প্রকৃতির হয়।
* র্জাসি গাভীর রং সাধারনত লালচে বাদামী এবং বিভিন্ন রং এর হয়ে থাকে।
* এ জাতের গাভীর দেহ লম্বা,পা খাট, ভারী নিতম্ব ও চূড়া হতে কোমড় পর্যন্ত পিঠ একদম সোজা থাকে পিঠে কুজ থাকে না ।
* মুখবন্ধনী কালো ও চকচকে হয় ৷ মাথা ও ঘাড় বেশ মানানসই, শরীর মেদহীন।
* জিহবা ও লেজ কালো।
* শিং পাতলা এবং সামনের দিকে সামান্য বাঁকানো থাকে
* র্জাসি গাভীর সাধারনত হলিস্টিনের চেয়ে ছোট এবং ওজন কম হয়।
* জার্সি গাভী অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ে বয়প্রাপ্ত হয় এবং অনেক বয়স পর্যন্ত দুধ প্রদানে সক্ষম।
* এ জাতের গাভী দৈনিক ১৫-২০ লিটার দুধ দেয় ।
* বাৎসরিক দুগ্ধ উৎপাদন ২,৭৫০ – ৪,০০০ লিটার
* এ জাতের গাভীর দুধে ফ্যাট/ননির (৬%) পরিমান বেশি থাকে।
* র্জাসি গাভীর সাধারনত ৩৬০-৫৪০ কেজি হয়ে থাকে।
* জন্মের পর বাছুরের ওজন প্রায় ২৫ থেকে ২৭ কেজি পর্যন্ত হয়
* কম ওজন, কম খরচ এবং ঘাস খাওয়ার প্রবণতার কারণে অল্প জায়গায় অধিক গরু পালন করা যায়।
* অন্যান্য “ডেইরি কাউ” বা দুধ উৎপাদনকারী জাতের গরুর সাথে ক্রস ব্রিডিং করানো যায়।
*অধিক বংশ বৃদ্ধি করার ক্ষমতা।
ফ্রিজিয়ান হলেস্টনঃ
হলস্টিন ফ্রিজিয়ান, এ জাতের গরুর উৎপত্তিস্থান হল্যান্ডের ফ্রিজল্যান্ড প্রদেশে। হল্যান্ডের ভাষায় এদেরকে ফ্রিজিয়ান বলা হয়।এ জাত সাধারণত শীত প্রধান অঞ্চলের জাত।দুধাল গাভীর সকল জাতের মধ্যে এটা বড় আকৃতির জাত।
হলস্টিন ফ্রিজিয়ান গরুর বৈশিষ্টঃ
* ফ্রিজিয়ান গাভীর র্বণ সাধারনত ছোট বড় কাল ছাপযুক্ত এবং কখনো পুরোপুরি সাদা ও কালো হয়
* হলিস্টিন-ফ্রিজিয়ান গাভী আকারে সাধারনত বড় ও মাথা লম্বাটে সোজা হয়, কুজ অনুন্নত।
* গাভীর গড় ওজন ৫৫০-৬৫০ কেজি এবং ষাড়ের গড় ওজন ৮০০-৯০০ কেজি হয়ে থাকে।
* প্রথম গর্ভধারণের বয়স ১৮-২৪ মাস।
* পেছনের পা সোজা ।
* সদ্যজাত বাছুরের গড় ওজন ৩০-৩৬ কেজি।
* গাভীর ওলান বড় এবং দৈনিক হলিস্টিন-ফ্রিজিয়ান ২৫-৪০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।
অস্ট্রেলীয়া জাতঃ
এ জাতের গাভী অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান গাভীর বৈশিষ্ট্যঃ
* এরা ,সাদা,কালো ডোরা দাগের হয়ে থাকে।
* এদের সামনের দিক হালকা পিছনের দিক ভারি হয়ে থাকে।
* এরা গড়ে ১০-১৫ কেজি দুধ দিয়ে থাকে
* এ জাতের গরু ৩০০-৩৫০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে।
দেশী জাতঃ
দেশী গরুর জাত হিসাবে বলা য়ায-দেশী জাত,পাবনা জাত,চট্রগ্রাম লাল জাত,লাল সিন্ধি
দেশী জাতের বৈশিষ্ঠঃ
★দেশী জাত গাভীর র্বণ সাধারনত -লাল, কাল, সাদা, ধুসুর, ফ্যাকাশে, কালো-সাদা, লাল-ফ্যাকাশে
ইত্যাদি রং এর হয়ে থাকে।
★দেশী জাত গাভীর দেহের গঠন সাধারনত-বলবান,আটসাটো,বলিষ্ঠ হয়ে থাকে।
★এ জাতের গাভীর পিঠে সাধারনত-চুড়া বা কুঁচ থাকে।
★দেশী জাত গাভীর সাধারনত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী।
★দেশী জাত গাভী সাধারন মানের খাবার খায়।
★একটি পুর্ণা বয়সের গাভীর ওজন গড়ে ১০০-১২৫কেজি হয়।
★দেশী জাত গাভীর সাধারনত দৈনিক ১.৫-২.৫ কেজি দুধ দেয়।
★দেশী জাত গাভী প্রায় ১৮০ দিন দুধ দিয়ে থাকে।
★দেশী জাত গাভীর সাধারনত পরিশ্রমী হয়ে থাকে।
লাল সিন্ধিঃ
লাল সিন্ধি গাভী সাধারনত পাকিস্তানের সিন্ধি প্রদেশে দেখা য়ায়।
লাল সিন্ধি গরুর বৈশিষ্ঠ্যঃ
★ লাল সিন্ধি গাভী সাধারনত আকারে বেটে,পুষ্ট ,মাথা ছোট,কপাল চওড়া ,কপালের মাঝের অংশ কিছুটা উঁচু, গলকম্বল বৃহদাকার ও ভাঁজযুক্ত ও পা ছোট।
★ লাল সিন্ধি গাভী সাধারনত গাঢ় লাল রং ও চকলেট বর্ণের হয়ে থাকে। গাভী অপেক্ষা ষাঁড়ের গায়ের রং বেশি গাঢ় হয়।
★লাল সিন্ধি গাভী সাধারনত নাভি চামড়া বড় ও ঝুলন্ত হয়।
★এ জাতের গাভীর শিং ছোট ও মোটা এবং অগ্রভাগ সরম্ন ও সুঁচালো হয় ।
★লাল সিন্ধি গাভী সাধারনত দিনে ৬ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।
★লাল সিন্ধি গাভী সাধারনত ২৯৫ কেজি এবং ষাড় ৪৫০ কেজি হয়ে থাকে।
গির জাতের গরুর বৈশিষ্টঃ
ইন্ডিয়ার গুজরাটের সৌরাষ্ট্র এবং পার্শবর্তী 'গির' জঙ্গল এলাকার গরু বলেই জঙ্গল এর নাম এর সাথে মিল রেখে এটার নামকরণ হয়েছে 'গির'। গির গরু ব্রাজিলে বেশী পালন করা হয়।
এ জাতের গরুর বৈশিষ্টঃ
* গারো লাল গিরের প্রধান রং হলেও হালকা হলুদাভ ও সাদা রঙের হয়ে থাকে। এছাড়া কালো রং এর গির ও দেখা যায়।
* মোটা এবং পিছনে দিকে বাঁকানো সিং এবং চওড়া কপাল গিরের চেহারাতে আভিজাত্যের ছাপ এনে দিয়েছে। চওড়া কপাল অতি উষ্ণ আবহাওয়াতে গিরের শরীর ঠান্ডা করার রেডিওটর হিসাবে কাজ করে।
* লম্বা ঝুলানো কান এবং জেবু জাতের গরুর মধ্যে সবচে উঁচু চুট গির গরুতে এনে দিয়েছে সৌন্দের্যের এক বিশেষ মাত্রা। গির গরু উষ্ণ এবং আদ্র আবহাওয়াতে খুব ঘাম দেয়। যার ফলে তাপ নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন প্রকার পরজীবী নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণ এই জাতের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট। জেবু জাতের গরুর মধ্যে সবচে শান্ত এবং অনুগত গরু হিসাবে পরিচিত গির মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ থাকতে পছন্দ করে। এই জাতের ষাঁড় গরু পুরো গরুর পালের নিরাপত্তা প্রহরী হিসাবে কাজ করে। অত্যন্ত রোগ প্রতিরোধী এই জাতের গরু পালন খুবই সহজ এবং যেকোনো খাবারে এরা অভ্যস্ত।
* গির জাতের গরু ২০-২৪ মাসে প্রথম প্রজননক্ষম হয় এবং গাভী ৩০-৩৪ মাসে প্রথম বাচ্চা দেয়।
* গির গরু দৈনিক ২৫-১৮ লিটার দুধ দিয়ে থাকে।
* এ জাতের গরুর ষাঁড়ের ওজন ৫৫০ - ৭০০ কেজি। এবং গাভীর ৪০০-৪৫০ কেজি হয়ে থাকে।
* একটি গির গরুর গড় জীবনকাল সাধারণত ২০-২২ বছর।
হরিয়ানা
ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে এ জাতের গরুর আদি বাসস্থান।বর্তমানে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশে এ গরু দেখতে পাওয়া যায়।
হরিয়ানা জাতের গাভীর বৈশিষ্ট্যঃ
* দেহের গঠন বলিষ্ঠ ও আটোসাটো। লম্বা সরু পা বিশিষ্ট এ জাতের গরু বেশ লম্বা হয়ে থাকে।
* সাধারণত লাল বর্ণের হয় তবে হালকা ধুসর বর্ণেরও দেখা যায় ৷
* মাথা ও মুখ লম্বা ও সরু, গলা লম্বা, কপাল চ্যাপ্টা, চোখ বড় বড় এবং উজ্জ্বল৷
* শিং ছোট ও সরু যা উপরের দিকে উল্টানো। * দেহের তুলনায় লেজ ছোট ও সরু।
* গাভীর ওলান সামনের ও পিছনের দিকে প্রশস্ত। * সামনের দিকের বাঁট পিছনের বাঁট অপেক্ষা লম্বা।
* এ জাতের গরু কৃষি কাজ, ভারবহন ও দুধের জন্য বিশেষ উপযোগী।
* এ গরু ১ টন ওজনের মালামাল প্রতিঘন্টায় দুই মাইল দূরে নিয়ে যেতে পারে এবং একদিনে একটানা বিশ মাইল যেতে পারে।
* একটি গাভী প্রতিদিন ১০-১৩ লিটার এবং গড়ে বছরে ৩৮৩০ লিটার দুধ দেয়।
ব্রাউন সুইচঃ
প্রধানত সুইজারল্যান্ডের সুইজ (Schwyz), জাগ (Zug), এস টি গ্যালেন (St Gallen), লিউসার্ন (Lucerne) এবং জুরিখ (Zurich) প্রদেশ। বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকাতে এই জাতের গরু বেশি পাওয়া যায়।
এ জাতের গাভীর বৈশিষ্ট্যঃ
* বিশুদ্ধ বাদামি বর্ণের (অত্যন্ত গাঢ় বা হালকা) হয়ে থাকে। পিছিনের অংশ ও নাকের চারপাশের অংশ অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি গাঢ়। সাধারণত সাদা দাগ থাকেনা।
* নাক ও জিহ্বা কালো। খুর ও লেজের চুলের বর্ণও সাধারণত কালো হয়ে থাকে। নাকের চারপাশে ও শিং এর মাঝের অংশ হালকা রঙের ঘের (Band) থাকে।
* শক্তিশালী ও পরিশ্রমী। শরীরের মাংস অনেক শক্ত হয়
* এটি একটি বিশাল গরু যার ওজন প্রায় ৬০০-৮০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
* সদ্য জন্মগ্রহণ করা বাছুরের ওজন ৪৫-৪৮ কেজি।
* এ জাতের গাভীর গর্ভকাল দীর্ঘ।
* শান্ত ও সহজে উত্তেজিত হয়না।
* দৈনিক দুধ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২১-২৮ লিটার। দুধে ফ্যাটের পরিমাণ ৩.৬ - ৪.৪% ও প্রোটিন ৩.৫% প্রায়।
Collected